পুঁজিবাজারের টানা পতনের পাশাপাশি লেনদেনেও খরা দেখা দিয়েছে। বাজারের দৈন্যদশা যেন কিছুতেই কাঁটছে না। বছরজুড়ে ধারাবাহিকভাবে লেনদেন ও সূচক কমে একেবারে তলানিতে ঠেকেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। যা প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীদের হতাশ করছে। মূলত কারসাজি ঠেকাতে না পারায় আস্থার সংকটে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে দেশের পুঁজিবাজার। যা ১৯৯৬ সাল এবং ২০১০ সালের চেয়েও করুণ।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের সময় মন্দা দিয়েই শেষ হয় ডিএসইর লেনদেন। তখন মন্দার কারণ হিসেবে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছিল। যদিও নির্বাচনের পর বছরের শুরুতে পুঁজিবাজার নিয়ে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়। কিন্তু তা আর স্থায়ী হয়নি। জুনে বাজেটের পরপর পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে থাকে। এ সময় একের পর দর ও সূচক পতনের রেকর্ড ঘটনাও ঘটে পুঁজিবাজারে। পতনের ধাক্কায় চলতি বছরের প্রথম দিনে হওয়া লেনদেন ৬৯৬ কোটি টাকা কমে আজ (২৪ ডিসেম্বর) দাঁড়িয়েছে ২৩৯ কোটি টাকায়। আর ৫ হাজার ৪৯৬ পয়েন্ট নিয়ে বছর শুরু করা সূচক কয়েক দফা রেকর্ড পতনের পর সবশেষ আজ ঠেকেছে ৪হাজার ৩৯০ পয়েন্টে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আস্থার সংকটেই পুঁজিবাজারের এ করুণ দশা। আগের ধসে আমরা বিনিয়োগকারী হারাইনি, তাদের টাকা হারিয়েছে। কিন্তু এখন আমরা বিনিয়োগকারী হারিয়েছে। ২০১০ এ যেটা হয়েছে সেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য হয়েছে, এখন যেটা হয়েছে সেটা নজরদারীর অভাবের কারণেই হয়েছে।
তারা আরও বলেন, পুঁজিবাজারে যেভাবে চুরি-ডাকাতি হচ্ছে তাতে বিনিয়োগকারীরা একবারে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সব চক্র এখনও বাজার নিয়ে কারসাজি করছে। এ অবস্থায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থায় আমুল পরিবর্তনের কোন বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তারা।
বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ভালো সময় যেমন থাকে, তেমনি মন্দ সময়ও থাকে। কখনও কখনও মন্দ সময়টাও দীর্ঘস্থায়ী হয়। এ সময়টা ধৈর্য্য ধরে বাজারে থাকতে হয়। আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ যদি ভালো কোম্পানির শেয়ার কম দামে কেনা থাকে, তবে আজ হোক আর কাল হোক সেটার দাম বাড়বেই। দেশের পুঁজিবাজারে গত দুই মাস ধরে হতাশাজনক অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিনিয়োগকারীদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। কোম্পানিগুলোকে বাজারবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলেও মনে করছেন তারা।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল