দীর্ঘদিন ধরেই ধারাবাহিকভাবে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমছিলো। অবশেষে বিদেশিদের শেয়ারবাজার ছাড়ার প্রবণতা বন্ধ হয়েছে। একই সঙ্গে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। গত ১৩ দিনে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব বেড়েছে ৫০টি।
এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা ধারাবাহিকভাবে শেয়ারবাজার ছাড়তে থাকেন। যা অব্যহত থাকে চলতি বছরের ২০ মে পর্যন্ত। এসময়ের মধ্যে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমে ৯ হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে চলতি বছরেই কমে ৩৫৫টি।
বিও হলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্রোকারেজ হাউস অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারীর খোলা হিসাব। এই বিও হিসাবের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে লেনদেন করেন। বিও হিসাব ছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেন করা সম্ভব না। বিও হিসাবের তথ্য রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)।
সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮৩টি। যা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময় ছিল ১৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮টি। এ হিসাবে হাসিনা সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে বিও হিসাব বেড়েছে ২১ হাজার ৬২৫টি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পড়ে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট দেশ চালানোর দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। পতনের পর প্রথম চার কার্যদিবস শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হলেও, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে পতনের পাল্লা ভারী হয়েছে। শেয়ারবাজারে মন্দা দেখা দিলেও বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
অবশ্য সার্বিকভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়লেও চলতি বছরের ২০ মে পর্যন্ত বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমে। সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ৪৬ হাজার ৩৮৬টি। যারা ধারাবাহিকভাবে কমে ২০ মে ৪৬ হাজার ৩৩৬টিতে নেমে আসে। অর্থাৎ বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ৫০টি বেড়েছে।
এর আগে ২০২৪ সাল শেষে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাব ছিলো ৪৬ হাজার ৬৯১টি। আর হাসিনা সরকার পতনের সময় ছিলো ৪৭ হাজার ৮৪টি। এ হিসাবে হাসিনা সরকার পতনের দিনের তুলনায় বর্তমানে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কম আছে ৬৯৮টি। অবশ্য বিদেশিদের বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ছাড়ার প্রবণতা শুরু হয় ২০২৩ নভেম্বর থেকে। ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিলো ৫৫ হাজার ৫১২টি। এ হিসাবে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবরের পর দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে বিও হিসাব কমেছে ৯ হাজার ১২৬টি।
এদিকে হাসিনা সরকার পতনের পর স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা ধারাবহিকভাবে বাড়তে দেখা যাচ্ছে। সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ২৫ হাজার ৫১১টি। আর ২০২৪ সাল শেষে ছিলো ১৬ লাখ ১৮ হাজার ২৬২টি। অর্থাৎ চলতি বছরে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ৭ হাজার ২৪৯টি।
অন্যদিকে হাসিনা সরকার পতনের সময় স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিলো ১৬ লাখ ৩ হাজার ৮২২টি। এ হিসাবে সরকার পতনের পর দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ২১ হাজার ৬৮৯টি।
হাসিনা সরকারের পতনের পর শেয়ারবাজারে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা গেলেও তার আগে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছেড়েছেন। ২০২৪ সালের শুরুতে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিলো ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫১টি। আর বর্তমানে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮৩টি। অর্থাৎ ২০২৪ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিও হিসাব কমেছে ৮৩ হাজার ৮৬৮টি।
বর্তমানে শেয়ারবাজারে যে বিনিয়োগকারীরা আছেন, তার মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১২ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫৭টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় এই সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৩৪টি। অর্থাৎ হাসিনা সরকার পতনের পর পুরুষ বিনিয়োগকারীদের হিসাব বেড়েছে ১৯ হাজার ৪২৩টি।
বর্তমানে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব দাঁড়িছে ৪ লাখ ৪ হাজার ৪০টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় এই সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২ হাজার ৪৭২টি। এ হিসাবে হাসিনা সরকার পতনের পর নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ১ হাজার ৫৬৮টি।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নারী ও পুরুষ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি কোম্পানির বিও হিসাবও বেড়েছে। বর্তমানে কোম্পানি বিও হিসাব রয়েছে ১৭ হাজার ৭৮৬টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় এই সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ১৫২টি। সে হিসেবে গত ৯ মাসে কোম্পানি বিও হিসাব বেড়েছে ৬৩৪টি।
বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের যে বিও হিসাব আছে তার মধ্যে একক নামে আছে ১২ লাখ ৮ হাজার ৫৮৯টি, যা হাসিনা সরকার পতনের সময় ছিলো ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৭টি। অর্থাৎ হাসিনা সরকার পতনের পর একক নামে বিও হিসাবে বেড়েছে ২৪ হজার ৯১২টি।
অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের যৌথ নামে বিও হিসাব আছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৩০৮টি। হাসিনা সরকার পতনের সময় যৌথ বিও হিসাব ছিল ৪ লাখ ৬৭ হাজার ২২৯টি। অর্থাৎ গত ৯ মাসে যৌথ বিও হিসাব কমেছে ৩ হাজার ৯২১টি।