সরকার শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল (ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড – সিএমএসএফ)-কে একটি কেন্দ্রীয় ডিভিডেন্ড বিতরণকারী সংস্থা বা ‘ডিভিডেন্ড হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিষ্ঠানটির আইনি ভিত্তি শক্তিশালী করা এবং কার্যপরিধি বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।
প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ড সরাসরি সিএমএসএফ-এ জমা হবে। সেখান থেকেই বিনিয়োগকারীদের কাছে তা বিতরণ করা হবে। এই প্রক্রিয়ার সময় সিএমএসএফ বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড থেকে কর কেটে সরকারি কোষাগারে জমা দেবে। ফলে বিনিয়োগকারীদের আলাদাভাবে কর প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করার ঝামেলা থাকবে না, যা বর্তমান পদ্ধতিতে একটি সাধারণ সমস্যা।
সিএমএসএফ ২০২১ সালের জুনে গঠিত হয়েছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল অবণ্টিত ডিভিডেন্ড পরিশোধ এবং বাজারে তারল্য সরবরাহ করা। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা নগদ এবং ৩০৫ কোটি টাকার শেয়ার ডিভিডেন্ড বিতরণ করেছে।
তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য সিএমএসএফের পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ফান্ডটির প্রাসঙ্গিকতা এবং তহবিলের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে কঠোর সমালোচনা হয়। জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে শুধু সম্মানী ও অনুষ্ঠান বাবদ ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছিল, যেখানে ওই বছরের মোট পরিচালন ব্যয় ছিল ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন এ বিষয়ে মন্তব্য করেন, নজিবুর রহমানকে পুনর্বাসন করার জন্যই সিএমএসএফ করা হয়েছিল। এর কারণে শেয়ারবাজারের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কোম্পানির ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে যে টাকা ছিল, সেগুলো সিএমএসএফে জমা দিতে হয়েছিল। ফান্ডের টাকায় মিটিংয়ের পরে মিটিং করে নিয়ে যাবে, কিংবা সেটার সুদ দিয়ে ইচ্ছেমতো খরচ করবে, সেটাও নীতিগতভাবে সমর্থন করি না।
সম্প্রতি সিএমএসএফ প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবণ্টিত ডিভিডেন্ড পাঠানোর জন্য মধুমতি ব্যাংকে একটি বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব খোলার চেষ্টা করে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তখন তহবিলের আইনি ভিত্তি দুর্বল উল্লেখ করে হিসাব খোলার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে বলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিএমএসএফকে একটি ‘স্ট্যাটুটরি’ বা আইনসিদ্ধ তহবিলে রূপান্তরের প্রস্তাব তোলা হয়। এতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্মতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সিএমএসএফ অতীতে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে কিছু ইকুইটিতে বিনিয়োগ করেছে। আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলি মিউচুয়াল ফান্ড নামের একটি মিউচুয়াল ফান্ডের উদ্যোক্তা হিসেবেও সিএমএসএফ রয়েছে। এসব পদক্ষেপ বাজারে সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। নতুন কাঠামোতে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ব্যবহার করে আর কোনো বিনিয়োগ বা স্পনসরশিপ করার সুযোগ থাকবে না।
বর্তমানে কোম্পানিগুলো ডিভিডেন্ড বিতরণ করে এবং প্রতিটি কোম্পানি পৃথকভাবে কর প্রত্যয়নপত্র দেয়, যা করদাতাদের জন্য একটি জটিল প্রক্রিয়া। যাদের টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) আছে, তাদের ডিভিডেন্ড আয়ে ১৫ শতাংশ কর কাটা হয়, আর যাদের নেই, তাদের ক্ষেত্রে কর ২০ শতাংশ। কর ফাঁকি ঠেকাতে আয়কর রিটার্নে প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানির দেওয়া কর প্রত্যয়ন অনলাইনে পাওয়া যায় না, আবার অনেকে উৎসাহজনক প্রণোদনা না থাকায় কর প্রত্যয়ন সংগ্রহে আগ্রহী হন না। সংশ্লিষ্টদের দাবি, সিএমএসএফ যদি কেন্দ্রীয়ভাবে ডিভিডেন্ড বিতরণের দায়িত্ব নেয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা সম্মিলিত ডিভিডেন্ড আয়ের বিপরীতে একটি চালানের মাধ্যমেই কর অব্যাহতির সুবিধা নিতে পারবেন।