প্রায় এক বছর ধরে অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকা পুঁজিবাজার আলোর পথে ফিরতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলার জারিকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে এই সুবাতাস বইছে। যার ফলে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) শেষ চার কার্যদিবসে (১৩-১৬ ফেব্রুয়ারি) সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা বা ৫.৮৯ শতাংশ বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস উত্থান থাকলেও ফেব্রুয়ারি থেকে পুঁজিবাজারে পতনে নিমজ্জিত থাকে। সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে শুরু করে বাজার সংশ্লিষ্টরা পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক বা উত্থান ধারায় ফিরিয়ে আনতে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু কোনো পদক্ষেপই পুঁজিবাজারকে তার স্বাভাবিক পথে ফেরাতে পারেনি।
অবশেষে পুঁজিবাজারকে উপরের দিকে টেনে তুলতে দেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত ১৬ জানুয়ারি তার কার্যালয়ে বাজার সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করে পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য কতিপয় সহজ শর্তে ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা করাসহ কয়েকটি নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পরের কার্যদিবসে অর্থাৎ ১৯ জানুয়ারি ইতিহাসের সর্বোচ্চ উত্থান হয় পুঁজিবাজারে। কিন্তু এরপরের কার্যদিবসগুলোতে আবার উত্থান-পতন খেলায় চলে যায় পুঁজিবাজার।
এরপর গত ১০ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রত্যেক ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারবে। ব্যাংকগুলো নিজস্ব উৎস অথবা ট্রেজারি বিল বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই সার্কুলারের পর চার কার্যদিবসে (১৩ থেকে ১৬ জানুয়ারি) প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১৯ হাজার ৭৮৫ কোটি ৭৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বা ৫.৮৯ শতাংশ বেড়েছে। গত ১০ জানুয়ারি ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৭৪৫ কোটি ৭৫ লাখ ১৯ হাজার টাকায়। আর ১৬ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩১ কোটি ৪৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা।
এই চার কার্যদিবসের মধ্যে প্রথম কার্যদিবস বা ১১ ফেব্রুয়ারি ৫ হাজর ৬০৩ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার, দ্বিতীয় কার্যদিবস ৮’শ কোটি ৭০ লাখ ৮১ হাজার টাকার, তৃতীয় কার্যদিবস ৪ হাজার ৯১৫ কোটি ৮৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি বা চতুর্থ কার্যদিবস বাজার মূলধন ৮ হাজার ৪৬৫ কোটি ৩৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা বেড়েছে।
এই চার কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৪৯ পয়েন্ট বা ৭.৯৫ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ১৩ ফেব্রুয়ারি ৮৬ পয়েন্ট, ১৪ ফেব্রুয়ারি ৯ পয়েন্ট, ১৫ ফেব্রুয়ারি ৮৪ পয়েন্ট এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৭৯ পয়েন্ট বেড়েছে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক চার কার্যদিবসে ৫৯ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১০১ পয়েন্ট বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই সার্কুলারের পর ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেনও বেড়েছে। প্রতি কার্যদিবসেই বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। সার্কুলার জারির পর ১৩ ফেব্রুয়ারি ৫০৬ কোটি টাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি ৬৫৭ কোটি টাকা, ১৫ ফেব্রুয়ারি ৭৩০ কোটি টাকার এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি ৯১৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারকে গভীর অন্ধকার থেকে আলো পথে তুলে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের পাশাপাশি অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যদি তাদের বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেয় তবে এ বাজার বহুদূরে এগিয়ে যাবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও আস্থার সাথে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল